সড়ক দুর্ঘটনা

বিয়ের কয়েক ঘন্টার মাথায় বাস কেড়ে নিল পুলিশ কর্মকর্তার প্রাণ

  প্রতিনিধি ৪ অক্টোবর ২০২৩ , ১:৫৫:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

চৌধুরী নুপুর নাহার তাজ দিনাজপুর জেলা প্রতিনিধি

হাতের মেহেদির গাঢ় রং। নববধূর সঙ্গে কেটেছে মাত্র কয়েক ঘন্টা। এরই মধ্যে সব স্বপ্নের নির্মম সমাপ্তি টেনে দিল ঘাতক বাস। আচমকা এক ঝড়ে ভেঙে চুরমার করে দিল নবদম্পতির সংসার। মৃত্যুকে আলিঙ্গন করলেন নতুন বর পুলিশ কর্মকর্তা জহুরুল ইসলাম (৩৮)। এমন মৃত্যু কেউ মেনে নিতে পারছেন না। শোকে পাথর হয়েছে দুটি পরিবার।

মঙ্গলবার (৩ অক্টোবর) দিবাগত রাত ২ টার দিকে দিনাজপুরের বিরামপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থেকে নিহতের মরদেহ নিজ বাড়িতে এলে স্বজনদের আহাজারিতে ভারী হয়ে ওঠে চারপাশের পরিবেশ। নির্বাক নববধূ ও তার পরিবারের লোকজন। বিয়ে হতে না হতেই বিদায় নিল স্বামী। এমন পরিস্থিতিতে চোখের জলে ভাসছে সবাই।

এর আগে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৮টার দিকে বিরামপুর সরকারি কলেজ সংলগ্ন তেল পাম্পের সামনে যাত্রীবাহী বাসের ধাক্কায় নিহত হন জহুরুল। একই দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান নিহতের বন্ধু মোনাইম হোসেন সুজন (৪০)।

জহুরুল ইসলাম ফুলবাড়ী উপজেলার লক্ষ্মীপুর জয়নগর গ্রামের আফফার উদ্দিনের ছেলে। দুই বোন এক ভাইয়ের মধ্যে তিনি সবার বড়। তিনি নীলফামারীর ডিএসবির জলঢাকা জোনে এসআই পদে কর্মরত ছিলেন। মোনাইম হোসেন সুজন (৪০) খয়েরবাড়ি মির্জাপুর গ্রামের হাবিবুর রহমানের ছেলে। তিনি ফুলবাড়িতে একটি ওষুধ কোম্পানির রিপেজেন্টিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

পরিবার ও পুলিশ সুত্রে জানা গেছে, বিয়ে করতে গত ৩০ সেপ্টেম্বর ৭ দিনের ছুটিতে গ্রামের বাড়িতে এসেছিলেন জহুরুল। সোমবার (২ অক্টোবর) রাতে ফুলবাড়ী উপজেলার এলুয়াড়ী ইউনিয়নের বানাহার গ্রামের রুমা আক্তারের সঙ্গে বিয়ে হয় জহুরুলের। পরদিন মঙ্গলবার সকালে বন্ধু সুজনকে সঙ্গে নিয়ে মোটরসাইকেল যোগে রাজশাহীর বিশেষ দায়রা জজ জননিরাপত্তা বিঘ্নকারী অপরাধ দমন ট্রাইব্যুনালের একটি মামলার সাক্ষ্য দিতে যান তিনি। সাক্ষ্য শেষে বাড়ি ফিরছিলেন তারা। পথে বিরামপুর সরকারি কলেজ সংলগ্ন তেল পাম্পের সামনে ঘোড়াঘাট-দিনাজপুর আঞ্চলিক মহাসড়কে দিনাজপুর থেকে ছেড়ে আসা নওগাঁ গামী ওমর ফারুক পরিবহন নামে একটি যাত্রীবাস তাদের মোটসাইকেলটিকে ধাক্কা দিলে জহিরুল ও সুজন গুরুতর আহত হন। পরে হাসপাতালে নেওয়ার পথে মারা যান তারা। এ ঘটনায় বাসটিকে জব্দ করেছে পুলিশ।

জহুরুলের চাচাতো ভাই নওশাত আলম জানান, গত পরশু বিয়ে করতে বাড়িতে এসেছিলেন ভাই। গায়ে হলুদের দিন ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছিল। রাতে বিয়ে করে সকালে তিনি মামলার সাক্ষ্য দিতে রাজশাহী গেছিলেন। ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় মারা যান তিনি। পরিবারের কারোই কথা বলার মতো অবস্থা নাই।

বিরামপুর স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মো. সামসুজ্জামান বলেন, সড়ক দুর্ঘটনায় দুজনকে হাসপাতালে আনা হয়। তাদের মাথা এবং শরীরের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণের কারণেই মূলত তাদের মৃত্যু হয়েছে। বিরামপুর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুব্রত কুমার সরকার বলেন, ঘাতক বাসটি জব্দ করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।

জলঢাকা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা(ওসি) মুক্তারুল আলম বলেন, তিনি খুব ভালো মনের একজন মানুষ ছিলেন। বিয়ে করতে ৭ দিনের ছুটিতে ছিলেন তিনি। এর মাঝে একটি মামলার সাক্ষী দিতে রাজশাহী গিয়ে ফেরার পথে মারা যান তিনি। এভাবে অকালে একটি প্রাণ চলে যাবে কেউ কোনোদিন কল্পনা করেনি।

নীলফামারীর পুলিশ সুপার গোলাম সবুর বলেন, ঘটনাটি অত্যন্ত মর্মান্তিক। তিনি সাত দিনের ছুটিতে বাড়িতে অবস্থান করা অবস্থায় পেশাগত দ্বায়িত্ব বোধের কারনে আদালতে সাক্ষ্য দিতে যান। ফেরার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণ হারান। আমরা তার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করছি এবং তার বিদেহী আত্মার শান্তি কামনা করছি। একই সাথে তার পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাচ্ছি।

আরও খবর

Sponsered content

BengaliEnglishHindi